বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন
মুফতি আবদুল্লাহ আল ফুআদঃ
বিনয় ও নম্রতা মানব চরিত্রের মহৎ গুণ। অনন্য এ গুণের মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায়। শত্রুকেও মুহূর্তে কাছে টানা যায় একটুখানি কোমলতার মাধ্যমে। বিনয় ও নম্রতা ছিল প্রিয় নবীর মজ্জাগত।
রাসুল (সা.) তাঁর এই মহান গুণের মাধ্যমে জাহিলি যুগের চরম অহংকারী মানুষের হৃদয়ে ইসলাম গেঁথে দিয়েছিলেন। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন। অহংকার, আত্মগরিমা ও বড়ত্ব প্রকাশের এই সময়ে মহানবী (সা.)-এর অনন্য এ আদর্শ আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে চর্চা করা উচিত। তাহলে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে শান্তিময় সমাজ গড়ে উঠবে। এখানে রাসুল (সা.)-এর বিনয় ও নম্রতার কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো—
নাগরিকদের সঙ্গে নম্রতা : আবু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এলো। তিনি লোকটির সঙ্গে কথা বললেন। এ সময় তার কাঁধের গোশত (ভয়ে) কাঁপছিল। তিনি তাকে বলেন, তুমি শান্ত হও, স্বাভাবিক হও। কারণ আমি কোনো রাজা-বাদশা নই; বরং আমি শুকনো গোশত খেয়ে জীবনধারিণী এক নারীর পুত্র। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১২)
অন্যের মন্দ আচরণে হাসিমুখ : আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে পথে চলছিলাম। তখন তিনি নাজরানে প্রস্তুত মোটা পাড়ের চাদর পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এক বেদুইন তাঁকে পেয়ে খুব জোরে চাদর টান দিল। অবশেষে আমি দেখলাম, জোরে টানার কারণে রাসুল (সা.)-এর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। অতঃপর বেদুইন বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ আপনার কাছে আছে, তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিন।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন, আর তাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩১৪৯)
পাগলের প্রয়োজন পূরণ : আনাস (রা.) বলেন, এক নারী মানসিকভাবে একটু বিকারগ্রস্ত ছিল। সে নবীজিকে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে আমার কিছু প্রয়োজন ছিল। নবীজি তখন বলেন, হে অমুকের মা! বলো, তোমার প্রয়োজন পূরণের জন্য কোথায় যেতে হবে? নবীজি তখন ওই নারীর প্রয়োজন পূরণ করে দেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৩২৬)
সেবকের সঙ্গে সদাচার : আনাস (রা.) বলেন, আমি ১০ বছর রাসুল (সা.)-এর সেবা করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি উহ শব্দটি করেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না? (বুখারি, হাদিস : ৬০৩৮)
অমুসলিমদের সঙ্গে সৌজন্য : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একদল ইহুদি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আস-সামু আলাইকা! তোমার মরণ হোক। রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের ওপরও। আয়েশা (রা.) বলেন, তোমাদের ওপর আল্লাহর লানত ও গজব পড়ুক। তখন রাসুল (সা.) বলেন, হে আয়েশা! থামো। নম্রতা অবলম্বন করা তোমার কর্তব্য। রূঢ় আচরণ ও অশালীনতা বর্জন করো। আয়েশা (রা.) বলেন, তারা যা বলেছে তা কি আপনি শোনেননি? তিনি বলেন, আমি যা বললাম, তুমি কি তা শোননি? কথাটি তাদের ওপরই ফিরিয়ে দিয়েছি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে (আল্লাহর কাছে) আমার কথাই কবুল হবে আর আমার সম্পর্কে তাদের কথা কবুল হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০১)
বিজয়কালে নবীজির বিনয় : মক্কা বিজয়ের সময় নবীজি এবং তাঁর প্রিয় সাহাবাদের আনন্দের শেষ ছিল না। কিন্তু সেই মুহূর্তেও তিনি অহংবোধ প্রকাশ না করে বিনয়ের বার্তা ছড়িয়েছেন। সে সময়ের সাক্ষী আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আল্লাহপ্রদত্ত বিজয় দেখে বিনয়ে মাথা এত নিচু করে ছিলেন, যেন তাঁর দাড়ি বাহনজন্তুর পিঠ স্পর্শ করছিল। (সিরাতে ইবনে হিশাম : ২/৪০৫)
নবীজির বিনম্র জীবনাচার থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহ আমাদের পারস্পরিক আচার-আচরণে কোমলতা ও নম্রতা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন